ম্যাক্সিম গোর্কি: ভবঘুরে কিশোর থেকে বঞ্চিত মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছিলেন যে সাহিত্যিক
একদল বলেন, তিনি সাহিত্যে রুশ বাস্তববাদের জনক। পরক্ষণেই অন্যদল বলে ওঠেন, তিনি সমাজতান্ত্রিক বাস্তবতার লেখক। যার লেখনে শোনা যায় শোষিত শ্রমিক শ্রেণীর বিপ্লবের অভূতপূর্ব আখ্যান। বিশ্বসাহিত্য নিয়ে সচেতন অথচ এই রুশ লেখকের লেখা পড়েন নি এমন লোকের দেখা মেলা ভার! এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কে এই কালজয়ী লেখক? কে আর হতে পারেন, তিনি তো ম্যাক্সিম গোর্কি।
দুই শব্দবিশিষ্ট যে নামে ম্যাক্সিম গোর্কিকে বিশ্বসাহিত্য চেনে তাকে তাঁর নিজের পরিবারই এই নামে তাকে কখনও ডাকে নি। কারণ, ম্যাক্সিম গোর্কি যে তাঁর ছদ্মনাম। তাঁর পিতৃপ্রদত্ত নাম আলেক্সেই মাক্সিমভিচ পেশকভ। নিজনি নোভগরদ নামক এক অখ্যাত গ্রামে জন্ম নেওয়া আলেক্সেই মাক্সিমভিচ পেশকভ কীভাবে নিজের নাম বদলে তাবৎ দুনিয়ার কাছে ম্যাক্সিম গোর্কি নামে পরিচিত হলেন, এই নিবন্ধে জানব সেই আখ্যান।
ভবঘুরে কিশোর থেকে ম্যাক্সিম গোর্কি
জুলিয়ান পঞ্জিকা অনুযায়ী ১৮৬৮ সালের ১৬ মার্চ ভলগার তীরবর্তী নিজনি নগরভোদ গ্রামে ম্যাক্সিম ও ভারিয়া দম্পত্তির কোলজুড়ে এলো তাদের প্রথম সন্তান। গেগরিয়ান মতে দিনটি অবশ্য আরও ১২ দিন পর ২৮ মার্চ। সে যাই হোক, ভালোবেসে শিশুটির নামকরণ করা হয়েছিল আলেক্সেই মাক্সিমভিচ পেশকভ। বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায় পেশকভ বংশের ম্যাক্সিমের ছেলে আলেক্সেই।
আলেক্সেইয়ের বাবা ম্যাক্সিম সাভভাতেভিচ পেশকভ পেশায় ছিলেন ভোলগা স্টিমশিপ কোম্পানির একজন সাধারণ কর্মচারী। আলেক্সেইয়ের জন্মের বছর চারেকের মাথায় ১৮৭১ সালের গ্রীষ্মে বাবা ম্যাক্সিম ওলাওঠা রোগে গত হন। সন্তান-সন্ততি নিয়ে মা ভার্ভারার আশ্রয় হয় তাঁর বাবা ভাসিলি কাশিরিনের সংসারে। তবে একটু সুখের দেখা মেলে নি বিত্তবান নানার সংসারে। নানা নাতিকে দুই চোখে দেখতে পারতেন না। কারণে অকারণে মারধর করতেন। কিন্তু তাঁর দরদী নানী আকুলিনার দুই নয়নের মণি ছিলেন আলেক্সেই। নাতিকে প্রায়শই শোনাতেন ছড়া, কিংবদন্তি আর রূপকথার নানা গল্প। আলেক্সেইও খুব আগ্রহ নিয়ে তা শুনতেন। বস্তুত, অখ্যাত কিশোর আলেক্সেই থেকে সাহিত্যর চর্চা করে বিপ্লবের ঝড় তোলা ম্যাক্সিম গোর্কি হয়ে ওঠার ভ্রূণ জন্মায় ছেলেবেলায় নানীর হাতে।
আলেক্সেইয়ের প্রতি নানা বাড়ির সকলের উদাসীনতায় তাঁর ছেলেবেলা পর্যবসিত হয় তিক্ততায়, তবুও একরকমভাবে তার জীবন কাটছিল। দুর্ভাগা আলেক্সেই মাতৃছায়াও হারিয়ে ফেলেন ১৮৭৯ সালে। পেট পুরে দুবেলা দুমুঠো খাবার খেতে দিতেন না নানা। আলেক্সেই পান নি প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষাটুকুও। হাতে গোনা যে কয়দিন একটি স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন তা ছিল অনেকটা আমলে না নেওয়ার মতোই। আর বাড়িতে পড়াশোনার পরিবেশ না থাকায় হয়ে উঠেছিলেন ডানপিটে ভবঘুরে এক কিশোর। শেষ পর্যন্ত নানার বাড়ি থেকে উচ্ছেদও হয়েছিলেন চুরির দায়ে। এই ঘটনার পর নানা আলেক্সেইকে সাফ জানিয়ে দেয়, নিজের জীবনযাপনের রাস্তা নিজে দেখে নিতে।
পেটের দায় তাকে এক অজানা পথে নামায়। যেখানে প্রথম কিছুদিন পেট চালান নানা জনের ফায়-ফরমাস খেটে। এর কিছুদিন পর কাজ জুটে যায় একটি খাবার হোটেলে। পরবর্তীতে একে একে যুক্ত হন বিচিত্র সকল পেশায়— মুচির দোকান থেকে শুরু করে রেলস্টেশনের দাড়োয়ান, রাস্তার দিনমজুরি থেকে শুরু করে বাগানের মালির কাজ পর্যন্ত সকল কাজই করতে হয়েছে তাকে। বিক্ষুব্ধ জীবন, হাড়-খাটুনি আর জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাতে একের পর এক পেশা পরিবর্তন গিয়ে দিনের পর দিন কাটিয়েছেন পথে পথে ঘুরে। এভাবেই কৌশোর পেরিয়ে দারিদ্র্যকে নিত্য সঙ্গী করে যৌবনে পদার্পণ করেন আলেক্সেই।
পরিণত বয়সের ম্যাক্সিম গোর্কি আর আলেক্সেই কিন্তু এক জিনিষ নয়। ম্যাক্সিম গোর্কি জীবনপাথরে বীজ ফেলে অমূল্য শস্য ফলিয়েছেন। কিন্তু কেমন করে ছন্নছাড়া ডানপিঠে কিশোর আলেক্সেই হয়ে উঠলেন ম্যাক্সিম গোর্কি?
কপালে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না জুটলে কি হবে হাড়-খাটুনির কৌশোরে কাজের ফাঁকে ফাঁকে আলেক্সেই প্রায়ই মজতেন বই নিয়ে। শত কষ্টের মাঝেও একটু শান্তির পরশ খুঁজে পেতেন বইয়ের পাতায় পাতায়। তাঁর কাছে বইয়ের কোনো বাছবিচার ছিল না। একে একে অর্থনীতি, ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজনীতি, দর্শন সহ আরও অনেক কিছু। এভাবেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন অপ্রাতিষ্ঠানিক স্বশিক্ষিত।
একবার তো কাজানে পৌঁছে গিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির উদ্দেশ্যে, তবে তাকে ফিরতে হয়েছিল শূন্য হাতে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অভাবে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন চুরমার হয়। বিক্ষুব্ধ জীবন, স্বপ্ন চুরমার হওয়ার মর্মযাতনায় এই দফায় আত্মহত্যা করতে গিয়েও ব্যর্থ হয়ে ফিরেছিলেন।
আলেক্সেইয়ের কৈশোরের শেষ ভাগ এবং যৌবনের প্রথমভাগ কেটেছে কাজান শহরের আলো বাতাসে। তাঁর মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছিল কাজানের এক জরাজীর্ণ বাগানবাড়িতে। সেখানে থাকাকালীন তাঁর পরিচয় হয় প্লেৎনেভ নামের এক বিপ্লবী ছেলের সঙ্গে। সেকালে রাশিয়ায় চলছিল জারের রাজত্বকাল। আর দেশজুড়ে চলছিল শাসনের নামে রীতিমতো শোষণ আর অত্যাচার। দেশের এমন পরিস্থিতিতে প্লেৎনেভনের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে আলেক্সেই জড়িয়ে পড়েন ‘আত্মবিকাশ’ নামে একটি বামপন্থী বিপ্লবী দলের সাথে। বিপ্লবী দলের সাথে যুক্ত হয়ে পরিচিত হন কার্ল মার্কসের রচনাবলীর সাথে। স্বল্প সময়ে তাঁর চিন্তাধারায় আসে আমূল পরিবর্তন। দলের প্রতি তাঁর মূল কাজ ছিল দুটি— জ্ঞানদান আর দলীয় প্রচারকার্য সাধন।
আত্মবিকাশের সঙ্গে যুক্ত হয়ে হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে সমাজের জন্য গভীর মমত্ববোধ টের পান। একটি রুটি কারখানায় রুটি তৈরির কাজ জুটে যায়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম আর জীবনের সকল দুঃখ-দুর্দশার সঙ্গে এবার যুক্ত হয় পুলিশি সন্দেহ। চারপাশের প্রতিকূল পরিস্থিতি, অন্যায়, দুর্ভোগ, দুর্দশা তাকে এতটাই বিচলিত করে তুলেছিল যে আরেকবার আত্মহননের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। চিকিৎসকেরা সকল হাল ছাড়লেও ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল বিধায় এই যাত্রায়ও বেচেঁ ফিরেন।
এককালের বখে যাওয়া কিশোর ‘আলেক্সেই’ পরিণত বয়সে এসে হয়ে ওঠেন ‘মাক্সিম গোর্কি’। এই নামের পিছনেও এক টুকরো ইতিহাস রয়েছে। রুটি কারখানায় জর্জিয়ার তিতলিসে বামপন্থী আরেক শ্রমিক আলেক্সান্দর কালিজনির সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে। কালিজনি তাঁর জীবনের দুঃখ-দুদর্শার কাহিনী শুনে সেগুলো লিপিবদ্ধ করার পরামর্শ দেয়। এরপর শ্রমিক সমর্থিত ‘ককেশাস’ নামক একটি পত্রিকায় তাঁর প্রথম গল্প ‘মাকার চুদ্রা’ ছাপা হয়। আর এখানেই বদলে যায় তাঁর আদি নাম। গল্পের লেখকের নামের জায়গায় আলেক্সেই মাক্সিমভিচ পেশকভ তাঁর নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘মাক্সিম গোর্কি’। জীবনে দুঃখ আর সংগ্রামের কষ্টিপাথরে ঘষে নাম বদলেছিলেন মাক্সিম গোর্কি। বাংলায় গোর্কি শব্দের অর্থ ‘তেতো’ বা ‘তিক্ত’। যার অর্থ দাড়ায় তিক্ততায় ভরা জীবন। ম্যাক্সিম গোর্কির জীবন সংগ্রামের আখ্যান তাঁর নামের মাধ্যমেই প্রকাশ পায়।
আস্তাকুঁড়ে থেকে বন্ধুর পথে
ম্যাক্সিম গোর্কি প্রথাগত সকল নিয়মের বাইরে গিয়ে এক নতুন পথে যাত্রা শুরু করেছিলেন। সেই যাত্রার সঙ্গী-সাথী হিসেবে রেখে ছিলেন জেলে, মজুর, গণিকা, চাষী, চোর, লম্পট ও ভবঘুরে তামাল। যেখানে সারিবদ্ধভাবে স্থান করে নিয়েছে সমাজের নিচুতলার মানুষের হাড়ভাঙ্গা খাটুনি আর দুঃখ-দুর্দশার গল্প। তাঁর প্রতিটি অনুকাহিনীতে একদিকে যেমন সমাজের বঞ্চিতদের প্রতি গভীর মমত্ববোধ ফুটে উঠেছে, তেমন অন্যদিকে প্রকাশ পেয়েছে বিস্ময়কর সৃজনশক্তি, অভূতপূর্ব কল্পনা আর বর্ণনা। তাঁর এই ধারার কিছু বিখ্যাত গল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মালভা, বুড়ো ইজেরগিল, একটি মানুষের জন্ম ও চেলকাশ। এই লেখাগুলোর বেশিরভাগ প্রকাশিত হয়েছিল ভলগা নদীর পাড়ের কিছু স্থানীয় পত্রিকায়। তিনি তখনো তেমন নাম ডাক পান নি। তাঁর লেখার নিয়মিত পাঠক ছিলেন ভলগা পাড়ের মফস্বলের কিছু আমজনতা।
‘রেখাচিত্র ও কাহিনী’ নামে প্রবন্ধ ও গল্প নিয়ে একটি ছোট সংকলন প্রকাশিত হলে ম্যাক্সিম গোর্কির যশ খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সেকালে রাশিয়ার প্রধান দুই সাহিত্যিক ছিলেন চেখভ এবং তলস্তয়। রেখাচিত্র ও কাহিনী প্রকাশের পর থেকে তাঁদের নামের সাথে ম্যাক্সিম গোর্কির নামও সমানতালে উচ্চারিত হয়। কিন্তু ম্যাক্সিম গোর্কির লেখনে অঙ্কিত সমাজ বাস্তবতার চিত্র ওপরতালার ক্ষমতাসীনদের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দেয়। রুশ সাহিত্যের রত্নভাণ্ডার বিশাল। কিন্তু গোর্কির পূর্বে সমাজ বাস্তবতাকে কেউ এমন নির্মমভাবে তুলে ধরেন নি। ওপরমহল চাচ্ছিল কোনো না কোনো অজুহাতে গোর্কির একটা বিহিত করতে। মিথ্যা অভিযোগে গোর্কিকে গ্রেপ্তারও করা হয়। কিন্তু পর্যাপ্ত প্রমাণের অভাবে গোর্কিকে ছাড়তে বাধ্য হয়।
জেল থেকে ছাড়া পেয়ে গোর্কি অনুপ্রাণিত হন লেলিনের মতবাদ ও আদর্শে। চারদিকে বিপ্লবী আন্দোলন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ছিল। সমাজের সকল বয়সের লোকেরা এতে অংশ নিচ্ছিল। বিপ্লবী ছাত্রদের ওপর গুলি চালানোর অভিযোগে এবার গোর্কি লেখেন তাঁর অমর কবিতা ‘ঝ’ড়ো পাখির গান’। বাস্তবিক অর্থেই কবিতা পাখির গানের মতোই ছড়িয়ে পড়তে লাগল জনমানবের মুখে মুখে। বিপ্লবের মূল মন্ত্র হয়ে উঠলো ঝ’ড়ো পাখির গান:
এখনি ঝড় উঠবে। ঝড় উঠতে দেরি নেই।
তবু সেই দুঃসাহসী ঝ’ড়ো পাখি বিদ্যুতের ভিড়ে,
গর্জমান উত্তাল
সমুদ্রের ওপর দিয়ে দীপ্ত পাখসাটে উড়ে চলে।
তার চিৎকারে
পুলকিত প্রতিধ্বনি ওঠে,
চূড়ান্ত জয়ের ভবিষ্যবাণীর মতো
সমস্ত ভীষণতা নিয়ে ভেঙে পড়ুক,
ঝড় ভেঙে পড়ুক।
ভীত-সন্ত্রস্ত শাসকেরা এবার নড়ে চড়ে বসলো। জার কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে গোর্কি হয়ে উঠল বিষ ফোঁড়া। গোর্কিকে আবার কারাগারে বন্দি করা হলো। কিন্তু গোর্কি তখন আর কোনো সামান্য ব্যক্তি নন। তিনি রাশিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক ও সম্পদ। প্রিয় লেখকের গ্রেফতারের প্রতিবাদে দেশজুড়ে আন্দোলনের ঝড় ওঠে। যার মুখপাত্র ছিলেন খোদ তলস্তয়। জারের কর্মচারীরা এবারও গোর্কিকে ছাড়তে বাধ্য হয়।
কিন্তু জার কর্তৃপক্ষের জন্য ম্যাক্সিম গোর্কি হয়ে উঠলো অত্যন্ত বিপদজনক ব্যক্তি। আরজামাজ নামে একটি ছোট শহরে তাকে নির্বাসন দেওয়া হয়। জারের লোকজন ভেবেছিল এবার বুঝি গোর্কির লেখন থামবে! তবে তাদের সেই আশায় গুড়ে বালি ঠিকই পড়েছিল। উল্টো চেখভের উৎসাহে নাটক লেখা শুরু করেন গোর্কি। ১৯০২ সালে রচনা করলেন ‘লোয়ার ডেপথ’ বা ‘নিচুতলা’ নামে একটি নাটক। যার বাণী ছড়িয়ে পড়ে দেশ থেকে দেশান্তরে, সমগ্র ইউরোপে।
১৯০৫ সালের কথা। সারা দেশজুড়ে জারের শোষণের সাথে যুক্ত হয় খরা আর দুর্ভিক্ষ। অসংখ্য ক্ষুধার্ত মানুষ জারের মহলের অভিমুখে যাত্রা শুরু করে। নির্বিচারে গুলি চলে সর্বসাধারণের ওপর। গোর্কি আবার হাতে কলম ধরলেন। দেশের সকল দুরঅবস্থার জন্য সরাসরি দায়ী করে বসলেন জারের শোষণকে। তাঁর আবার ঠাই হলো কারাদুর্গে। গোর্কিকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে এবার শুধু দেশ জুড়ে নয়, ঝড় উঠলো সমগ্র ইউরোপে। সকলের চাপে আবারো গোর্কিকে ছাড়তে বাধ্য হলো জার কর্তৃপক্ষ।
দেশব্যাপী শ্রমিক আন্দোলন প্রকট হয়ে উঠলেও, বিপ্লবের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। জার কর্তৃপক্ষ আবার গোর্কিকে গ্রেফতারের ষড়যন্ত্র শুরু করে। কিন্তু গোপন সূত্রে এই খবর চলে যায় গোর্কির কানে। গোর্কি দেশ ছেড়ে জার্মানী ফ্রান্স হয়ে পড়ি জমায় আমেরিকায়। সেখানে বসেই তিনি রচনা করেন তাঁরা অমর উপন্যাস ‘মা’। জারের অত্যাচারের ভয়ে এই উপন্যাস প্রথম প্রকাশিত হয় ইংরেজিতে। এখন অব্দি উপন্যাসটির প্রায় তিন শতাধিক সংস্করণ বেরিয়েছে। প্রায় সকল ভাষাতেই উপন্যাসটির অনুবাদ গ্রন্থ বেরিয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় উপন্যাসখানি বিশ্বব্যাপী কতটা জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। মা ছাড়াও গোর্কি রচনা করেছেন বহু উপন্যাস। ছেলেবেলা, পৃথিবীর পথে, গ্রীষ্ম, ত্রয়ী, পৃথিবীর পাঠশালায় সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। জীবনের শেষ সময়ে লিখেছেন ‘ক্লিম সামগিনের জীবন’।
গল্প, কবিতা, নাটক কিংবা উপন্যাস প্রতিটি জায়গায় গোর্কি দেখিয়েছেন আস্তাকুঁড়ে থেকে বন্ধুর পথে পাড়ি জমিয়ে কীভাবে সৃষ্টিশীলতার অমোঘ সূর্যকে ছুঁতে হয়। মনে আছে গোর্কির, ‘বুড়ি ইজেরগিল’ নামের সেই রূপকথার কাহিনী? যেখানে দাংকো নিজের হৃদপিণ্ড তুলে আনছেন আর হৃৎপিণ্ডের প্রতীকী আলো পথ দেখাচ্ছে সর্বসাধারণকে। সমাজ বাস্তবতার সাথে মানবতার এমন সংমিশ্রণের চিত্র ম্যাক্সিম গোর্কি একজন সুদক্ষ শিল্পীর মতো করে একেছেন। যার নজির বিশ্ব সাহিত্যে বিরল।
লড়তে লড়তে ম্যাক্সিম গোর্কির জীবন প্রদীপ নিভে আসছিল, কিন্তু তিনি জীবন থেকে এক মুহুর্তের জন্যও দূরে সরে যান নি। তাঁর দূরদৃষ্টি দিয়ে ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে সামনে যুদ্ধ আসছে। মৃত্যুর পূর্বে শয্যাশায়ী অবস্থায় দেশবাসীকে সতর্ক করে বলেছেন, “যুদ্ধ আসছে তোমরা তৈরি থেকো।” এর পরবর্তী ঘটনা কারো অজানা নয়— কয়েক বছরের মধ্যেই তাঁর কথা সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছিল।
This article is in Bangla language. It is about Maxim Gorky’s biography. Maxim Gorky, is a Russian writer, a founder of the socialist realism literary method.
Feature Image Source: RuVerses
Reference:
- 5 reasons why Soviet writer Maxim Gorky is so great
- RuVerses Maxim Gorky
- Maxim Gorky
- Maxim Gorky
- Maxim Gorky
- মাইকেল এইচ. হার্ট। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ১০০ মনীষীর জীবনী। পৃষ্ঠা: ১৩১-১৩৩